লালমনিরহাটে চলতি মৌসুমে পুরোদমে শুরু হয়েছে বোরো ধান কাটা-মাড়াই। এ বছর অনুকূল আবহাওয়া, রোগবালাইয়ের প্রকপ কম থাকায় ধানের ভালো ফলনে চাষিদের চোখে মুখে ফুটে উঠেছিল হাসির ঝিলিক। তবে সেই হাসির ভাঁজে আছে দুশ্চিন্তার ছায়া। ধানের দাম কম হওয়ায় উৎপাদন খরচ হিসাব করে চাষিরা লাভবান হতে পারছে না।
লালমনিরহাট জেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, এ বছর জেলায় ৪৮হাজার ১৫হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ধান কাটা হয়েছে ৭হাজার হেক্টরের কিছু বেশি।
সরেজমিনে বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা যায়, সোনালী ধানের শীষে ভরে উঠেছে বিস্তীর্ণ মাঠ। মাঠে মাঠে পাকা ধানে মৌ মৌ গন্ধ। তপ্ত রোদে কষ্টের সোনালী ফসল ঘরে তুলতে চাষিদের নেই কোনো ক্লান্তি। আবাহাওয়া অনুকুলে থাকায় দ্রুত ফসল ঘরে তোলার তোড়জোড় কৃষক-কৃষাণীদের।
চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোপণ থেকে শুরু করে ধান ঘরে তোলা পর্যন্ত শ্রমিক, সার, কীটনাশক, সেচসহ বিভিন্ন আনুষঙ্গিক বাবদ ফসল উৎপাদনের খরচ হয়েছে বেশি। ধারদেনা আর ঋণ করে আবাদ করায় ঘরে উঠানোর আগেই বাজার বা বাড়ির উঠান থেকেই বিক্রি করতে হচ্ছে কষ্টে ফলানো ধান।
আর এই সুযোগে মৌসুমি কিছু ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ধান কিনছে। শুরুতে ধানের ভালো দাম থাকলেও বর্তমানে সরবরাহ বাড়ায় সপ্তাহের ব্যবধানে মন প্রতি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তাই ধানের ফলন ভালো হলেও শঙ্কা দেখা দিয়েছে নায্যমূল্যে পাওয়া নিয়ে। এতে করে লাভবান হতে পারছেন না চাষিরা। এজন্য ধানের নায্য মূল্য নিশ্চিতে সরকারের তদারকি বাড়ানোর দাবি কৃষকদের।
জানা যায়, সরকারি ভাবে ধানের দাম প্রতি কেজি ৩৬ টাকা চাল প্রতি কেজি ৪৯ টাকা করা হলেও কৃষক সেই দাম পাচ্ছে না।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার মকড়া ঢঢ গাছ গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন জানান, ধানের ফসল ভালো হলেও উৎপাদন খরচ হিসাব করলে ধানে লাভ হবে না। যে পরিমাণ খরচ করা হয়েছে সেই টাকাও উঠবে না।
একই গ্রামের কৃষক বজলার রহমান বাবু বলেন, আবহাওয়া ভালো থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। পাশাপাশি সার ও কীটনাশকের দাম বেড়ে যাওয়ায় আবাদে খরচ বেড়েছে। প্রতি বিঘায় সব মিলে খরচ হয়েছে ১৫ থেকে ১৭হাজার টাকা। নিজের পরিশ্রম তো আছেই। কিন্তু বাজারে বা বাড়ির উঠানে আমরা ধান বিক্রি করতে গেলে দাম পাচ্ছি না। কিছু ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কম দামে ধানে কিনছে। আমাদের দুঃখ দুর্দশা কেউ দেখে না।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্যান) গোলাম মোস্তফা মোঃ জোবাইদুর রহমান বলেন, অনুকুল আবহাওয়া থাকায় ধানে রোগ-বালাইয়ের পরিমাণ কম ছিল। এতে করে ধানের ফলন ভালো হয়েছে। আশা করছি কৃষকরা ধানের ভালো দাম পাবে এবং লাভবান হবে।